• শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪২৮
তৃতীয়বারের মতো তিস্তায় পানি বৃদ্ধি

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

প্রাকৃতিক দুর্যোগ

তৃতীয়বারের মতো তিস্তায় পানি বৃদ্ধি

  • রফিকুল ইসলাম রফিক, রংপুর
  • প্রকাশিত ২৮ আগস্ট ২০২১

তিস্তায় তৃতীয়বারের মতো পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে রংপুরের নিম্নাঞ্চল ও তিস্তার তীরবর্তী এলাকায় প্রায় আড়াই হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। শুকনো খাবার আর বিশুদ্ধ পানির অভাবে দুর্ভোগ বাড়তে শুরু করেছে।  রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, শুক্রবার বিকাল থেকে পানি বাড়তে থাকে। গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। আজ তিস্তার গংগাচড়া অংশে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এখন সেটি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

এদিকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ আলহাজ মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি গতকাল শনিবার উপজেলার আলমবিদিতর ও কোলকোন্দ ইউনিয়নের পানিবন্দি ও তিস্তা নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৩০০ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।

এ সময় রাঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। একই সাথে তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সরকার নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, গংগাচড়ার কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী, আলমবিদিতর, গজঘণ্টা ও মর্নেয়া ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম পানি প্রবেশ করে বাড়িঘর দেড় থেকে আড়াই ফুট পানিতে প্ল­াবিত হয়ে পড়েছে।

এদিকে গত ১০ দিনে তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়েছে ১১৫ পরিবারের বাড়িঘর। চলতি মৌসুমে মোট বিলীন প্রায় ২১৫ পরিবারের বাড়িঘর। পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে আমন ধান ক্ষেত, মরিচ, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজি ও ফসলের ক্ষেত। বন্যায় ভেসে গেছে পুকুরের মাছও।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কোলকোন্দ ইউনিয়নের চর শংকরদাহ, বাগেরহাট, ইছলী মটুকপুর গ্রাম। সেখানে প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রান্নাঘর, আঙিনাসহ কোথাও এক কোমর, কোথাও এক হাঁটুপানি উঠেছে।

চরশংকরদহ গ্রামের মজিবর রহমান জানান, কয়দিন আগোত পানি আসি গেইল। সেলা মাসনের বাতি কইদিন থাকনোং। ফির শুকোরবার (শুক্রবার) থাকি পানি আসতেছে। আমরা যাই কোটে (কোথায়) বাড়িত পানি, জমিত পানি। ধানগুলে সোউগ (সব) তুলে গেইচে। ধান নস্ট হইলে সোউগ শ্যাষ হইবে।

ইছলী মকুটপুর গ্রামের হয়রত আলী বলেন, কতদিন থাকি হামরা কওছি একনা বাঁধ দেও। কাউও কতা শোনে না। দুইদিনে চারদিনে বাড়ি ছাড়ি (ছেড়ে যাওয়া) যাওয়া ভালনাগে (ভালো লাগে) । গরু, ছাগল, ছৈয়ল পৈয়ল নিয়ে কেংকা করি বাঁচি।

কৃষক আব্বাস বলেন, বার বার পানি ওঠে। এমন করি থাকা যায় না। কষ্ট হয়। তাই ঘরবাড়ি ভাঙিয়া পাশের বাঁধোত চলি যাইতোছি।

কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কয়েকদিন থাকি পানি কমে আর বাড়ে। হামরাগুলা দিশেহারা হয়া পড়নো। খুব কষ্টোত আছি। শুকনা জায়গাও নাই যে সেটে যায়্যা উঠমো। কির আর করার আছে। পানিত বন্দী হয়া আছি।

লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাদী জানান, পানি বাড়তে থাকায় আমি নিজেই মাইকিং করে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসার আহ্বান জানিয়েছি। প্রতিটি বাড়িতে দুই থেকে তিন ফুট পানি ওঠায় অনেক পরিবার গরু-ছাগল ও মালামালসহ নিরাপদ স্থানে চলে গেছে।

কোলকন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু জানান, পানি আসা-যাওয়ার খেলায় আমরা অসহায়। আমার ইউনিনের লোকজন পানির কাছে, তিস্তার কাছে অসহায়। আমরা তাদের যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানিয়েছেন, তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেলে ১২ ঘণ্টার মধ্যে ভাটিতে, বিশেষ করে, গঙ্গাচড়া উপজেলার নিম্নাঞ্চল লক্ষীটারী এবং কাউনিয়ায় পানি বৃদ্ধি পায়। এবারও বাড়ছে। তিনি বলেন, এই পানি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। আবার দ্রুত নেমে যায়। এখন তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads